স্টাফ রিপোর্টার-
রাজশাহী'র-বাগমারা উপজেলার দুলালীপাড়ার সেই পুকুরে এবার বিষ দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে শনিবার দিবাগত গভীর রাতে সেই হেলমেট বাহিনী পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে। এতে সকালের মধ্যেই মাছগুলো ভেসে উঠে। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায়।এছাড়াও রাতে ওই হেলমেট বাহিনী পুকুরের কেয়ারটেকার রায়হান আলীর বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করে। তবে প্রাণ ভয়ে তিনি ঘর থেকে বের হননি। খবর পেয়ে রোববার সকালে পুলিশ পুকুরটি পরিদর্শন করে। কে বা কারা পুকুরে বিষয় প্রয়োগ করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম। রায়হান আলী বলেন, রাত আনুমানিক ১টা থেকে ২টার মধ্যে পুকুর পাড়ে কিছু লোকজনের উপস্থিতি টের পাই। কে কে চিৎকার করলে তারা আমার বাড়িতে এসে হামলা করে। এ সময় তারা হাসুয়া দিয়ে ৭/৮ জায়গায় আঘাত করে ঘরের বেড়ার টিন ফুটে করে দেয়।তিনি আরও বলেন, সকালে উঠে দেখি পুকুরে মাছ ভেসে উঠে সাদা হয়ে গেছে। বিষয়টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন এসে মাছগুলো ধরে নিয়ে যায়। একেকজন মানুষ ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত মাছ ধরে নিয়ে গেছে। পুকুর মালিক খলিলুর রহমান বলেন, রোববার সকালে পুকুরের মাছ মারার জন্য জেলে ঠিক করেছিলাম। সকালে পুকুরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় জানতে পারি পুকুরে বিষ দেওয়া হয়েছে এবং মাছ সব মরে ভেসে উঠৈছে। লোকজন এসে সেই মাছ ধরে নিয়ে গেছে। ওই পুকুরে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ বলে দাবি করেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৭ ও ২১ আগস্ট দুই দফায় মাছ লুট করে স্থানীয় বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান। এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন জালাল উদ্দিনের হেলমেট বাহিনী। জালাল উদ্দিন মুনসুরের বোন জামাই। আর মুনসুরকে পিছন থেকে মদদ দিচ্ছেন বাগমারা উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা। খলিলুর রহমান বলেন, উপজেলা বিএনপির ওই শীর্ষ নেতা মুনসুর রহমান ও তার লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করার পরের দিন ৪ নভেম্বর আমাদের ইজারাদারের কাছে ১৫- লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ওই দিন তাদের উপর হামলা করে দুই নারীসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে জখম করে। আবার শনিবার ওই নেতা তাদের সঙ্গে মিটিং করার পর পুকুরে বিষ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মুনসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পুকুরে বিষ দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান তিনি। সম্প্রতিক রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের দুলালীপাড়া গ্রামে দাবি করা ১৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে পুকুরসহ ১৩ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। এই কাজে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘হেলমেট বাহিনী’ কাজে লাগানো হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এরা সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। এখন কাজ করছেন বিএনপি নেতার হয়ে। গত ২৫ অক্টোবর দুলালীপাড়া আন্ধিয়ার বাগানের ব্যক্তি মালিকানাধীন এ পুকুরসহ জমি লিজ নেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের চার নেতাসহ পাঁচজন। ৪ নভেম্বর লিজগ্রহীতারা মাছ ছাড়ার জন্য পুকুর ঘাটে গেলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নারীসহ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের দুইটি মামলা হলেও তারা জামিনে এলাকায় অবস্থান করছে। অন্তত ১০ জন আহত হন। আন্ধিয়ার বাগানের পুকুরসহ জমির পরিমাণ প্রায় ১৩ একর। এর মধ্যে গোয়ালকান্দির এনায়েতুল হক বিন্দু, নিমপাড়ার নুরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, খলিলুর রহমান ও অনন্তপাড়ার শাহজামালের জমি রয়েছে ১২ একর। বাকি এক একর অন্য তিনটি পরিবারের.।জমির মালিকদের মধ্যে খলিলুর রহমান, মাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং শাহজামাল মাড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তারেক রহমান প্রজন্ম দলের মাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমান। ২৫ অক্টোবর মালিকদের কাছ থেকে পুকুরসহ জমি লিজ নেন উপজেলার বড়বিহানলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মিলন, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কনপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা, গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ হিটলার এবং ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান মিল্টন। ওইদিন লিজের চুক্তিনামা করা হয়। শর্ত অনুযায়ী ৪ নভেম্বর গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রউফ হিটলার এবং তাদের আরেক অংশীদার দুলালিপাড়ার রায়হান আলী পুকুরের লিজ বুঝে নিয়ে মাছ ছাড়ার জন্য যান। এ সময় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। লিজ গ্রহীতাদের অভিযোগ, দুলালীপাড়া গ্রামের ‘জালাল বাহিনীর’ লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছে। জালাল উদ্দিন গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন সরকারের ‘হেলমেট বাহিনীর’ প্রধান হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে অতীতে নানা অভিযোগ ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জালাল ও তার অনুসারীরা স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার বাহিনী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। তারা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশকিছু পুকুর দখল ও মাছ লুটেও অংশ নেয়। লিজগ্রহীতা গোলাম মোস্তফা বলেন, “ঘটনার দিন বিকালে লিজ নেওয়া পুকুর ও জমি পরিদর্শন করে কবে কীভাবে মাছ ছাড়ব, সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। এ সময় জালাল এসে আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে এই পুকুরে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান।
এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যন্ত জালালের ‘হেলমেট বাহিনী’ এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাদের পিটিয়ে জখম করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আমাকেসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করে।
সম্পাদক এবং প্রকাশক : মোহাম্মাদ মিঠু আহম্মেদ,
সহ-সম্পাদ, নাহিদ হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ তারিকুল ইসলাম খাঁন, বার্তা সম্পাদক , জাহাঙ্গীর আলম,
পুঠিয়া , রাজশাহী, # ই-মেইল: mdmithuahemmad123@gmail.com
Copyright by সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ